আসাফ উদ্ দৌলা আশেক

“মানুষ, গ্রহ এবং সমৃদ্ধিতে বিনিয়োগ”
মহামারী কোভিড ১৯ এর কারণে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনৈতিকখাত পর্যটনে ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়। আগামীতে এই ধরণের বিপর্যয় হতে পর্যটনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে টেকসই পর্যটন উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এখন এই খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িঁয়েছে। তাই ইউএনডব্লিউটিও বিশ্ব পর্যটন দিবসের প্রতিপাদ্যে “পর্যটনে সবুজ বিনিয়োগ” অর্থাৎ বিনিয়োগকে তার অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পর্যটনের পুনরুদ্ধার এবং ভবিষ্যতে এর বৃদ্ধি ও উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছে।

প্রসঙ্গতঃ বাংলাদেশে বিশ্ব পর্যটন দিবস উদ্যাপন শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়ালোকে আগামী একটি বৎসর পর্যটনখাত সংশ্লিষ্ট উন্নয়নে কোন পরিকল্পনা কখনো গৃহিত বা বাস্তবায়িত হতে দেখা যায়নি।

ইউএনডব্লিউটিও ফোকাস্ করছে ট্রাডিশনাল এবং নন-ট্রাডিশনাল বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যা মানুষের জন্য, গ্রহের জন্য এবং সমৃদ্ধির জন্য পর্যটনকে সক্ষম করে তুলবে। জলবায়ু পরিবর্তনে স্থিতিস্থাপক তৈরী, কার্বণ নিঃসরণ কমানো, সম্পদের দক্ষ ব্যবহার ও সবাইকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নবান্ধব পর্যটনখাত গড়ে তুলতে পর্যটনে সবুজ বিনিয়োগের বড় ভুমিকা আছে। সারা বিশ্বে পর্যটনের বাজার হু হু করে বাড়ছে। বৈশ্বিক পর্যায়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারের চেয়ে তিনগুন হারে বাড়ছে পর্যটন খাতের আয়। তার জ্বরন্ত প্রমাণ অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়া দেশ শ্রীলংকা। পর্যটনের সঠিক ব্যবহারে মাত্র এক বৎসরের মাথায় ঘুরে দাড়িঁয়েছে দেশটি। পর্যটনের এই বাজারবৃদ্ধি কিংবা বিনিয়োগ কতটা টেকসই এবং পরিবেশকে মাথায় রেখে করা হচ্ছে? দেখা যাচ্ছে, জনপ্রিয় পর্যটন স্পটগুলোতে মানুষের আনাগোনা এতই বেড়ে যাচ্ছে যে, তা সেই জায়গার জন্য ঝুকিঁ তৈরী করছে। তাই পর্যটনখাতে বিনিয়োগ সতর্কতার নীতি অবলম্বন করা জরুরি হয়ে পড়ছে।

পর্যটন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে, নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবস্থা, ভু-গর্ভস্থ পানির সুষম ব্যবহার, কার্বণ নিঃসরণ কমানো, উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জীব বৈচিত্র্য রক্ষা, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা, দক্ষ জনশক্তির ব্যবহারসহ সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে একটি সবুজ বিনিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এখনই সবুজ বিনিয়োগ নীতিমালার আলোকে পর্যটন বিনিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করা না হলে এক সময় বিনিয়োগকারি এবং গ্রহের জন্য খারাপ কিছু হবার আশংকাই বেশি। আর্ন্তজাতিক পর্যবেক্ষণেপর্যটন দিবস ফোকাস করছে- মানুষ (শিক্ষা এবং দক্ষতা বিনিয়োগ করে), গ্রহ (টেকসই অবকাঠামো এবং সবুজ রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করে) এবং সমৃদ্ধ বিনিয়োগ (উদ্ভাবন, প্রযুক্তি এবং উদ্যোগক্তা তৈরী করে)।

মানুষের মধ্যে বিনিয়োগঃ শিক্ষা এবং উচ্চতর দক্ষতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

পর্যটন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কর্মক্ষেত্র গুলোর অন্যতম। ২০১৯ সালে প্রতি ১০ জনের মধ্যে এক জনের কর্মসংস্থান হয়েছে পর্যটন সেক্টরে। অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যময় কর্মসংস্থানের জন্য পর্যটন একটি হাতিয়ার হিসেবে প্রমানিত হয়েছে।

গ্রহে বিনিয়োগঃ পর্যটনের সবুজ রূপান্তরকে সমর্থন করা।

আমাদের এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, শুধু গ্রহের জন্য নয়, পর্যটন খাতের সবুজ রূপান্তর খুবই প্রয়োজন টেকসই পর্যটনের জন্য। প্রতিযোগিতা বাড়াতে এবং স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধির জন্য এবং সবুজ রূপান্তরকে সমর্থন করার জন্য পর্যটনখাতে উদ্ভাবনকে অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে হবে।

সমৃদ্ধিতে বিনিয়োগঃ উদ্ভাবন এবং উদ্যোগক্তা বৃদ্ধি।

ডিজিটালাইজেশন এবং ইনোভেশন প্রোগ্রামগুলি বিশেষ করে তরুণদের সমর্থন করার জন্য একটি কৌশলগত অগ্রাধিকার। নারী, যা পর্যটন খাতের কর্মশক্তিকে উন্নত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া বিশ্বব্যাপী প্রয়োজন উদ্যোগক্তাকে সমর্থন এবং উৎসাহিত করে এমন কর্মসূচীতে বিনিয়োগের মাত্রাবৃদ্ধি করা এবং উদ্ভাবনের সুযোগ সৃষ্টি করা যা পর্যটন খাতের জন্য অত্যান্ত প্রয়োজন।


লেখক: পর্যটন উদ্যোগক্তা